বঙ্গ-ভাবনা – ২ ,রতন টাটার স্মরণে: এক SMS এর কাহিনী

Articles

রতন টাটার জীবনাবসান – এর ফলে স্বাধীন ভারতের শিল্পের ইতিহাসে এক যুগের অবসান ঘটল। তিনি দু দশক টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে টাটা গ্রুপের ব্যাপক এবং সর্বাঙ্গীন বৃদ্ধি ঘটেছিলো। টাটা গ্রুপের নেট ওয়ার্থ  এখন  হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ লক্ষ কোটি টাকা এবং দু দশকে রতন টাটা এই গ্রুপ কে সারা পৃথিবীতে প্রসারিত করেছেন এবং বিদেশে  বহু  বিদেশী কোম্পানি ও ব্র্যান্ড কে অধিগ্রহণ করেছিলেন।

এটি সম্ভব হয়েছিল তাঁর দূরদর্শিতা  এবং দক্ষতার জন্য।  তাঁর আমলে টাটা গ্রুপ বহু লোকহিতকর ও জনহিতকর প্রকল্প ভারতবর্ষের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় কার্যকরী করেছিল, এবং প্রান্তিক স্তরে এই সব এলাকার মানুষের জীবনে এক মৌলিক পরিবর্তনও এনেছে।

রতন টাটা এই জনহিতকর প্রকল্প গুলির সমর্থক ও পোষক ছিলেন। শিল্প জগৎ এর  প্রথম সারির এক জন দিকপাল হয়েও তিনি চিরকাল মনে করতেন যে এই সব সম্পত্তি, ক্যাপিটাল, সুযোগ ও পরিকাঠামো সবটাই ট্রাস্ট হিসাবে দেখা উচিত এবং যারা এর পরিচালক তাঁরা মানুষের জন্য এই সম্পদ কেবল মাত্র একজন ট্রাস্টি হয়ে দেখাশোনা করবেন।

রতন টাটা হয়তো এই কারণেই অনেকের থেকে একটু অন্যরকম ছিলেন, একটু আলাদা ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অতীব সরল ও সহজ, অনাড়ম্বর জীবন যাপনে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। ভারত কে আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রচেষ্টায় তাঁর অবদান অপিরিসীম। ভারত কে বিশ্ব শিল্পের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করার যে উদ্যোগ, সেই উদ্যোগে তাঁর অবদান চিরকাল লেখা  থাকবে কৃতজ্ঞতার স্বর্ণাক্ষরে।

স্বাভাবিক ভাবে তাঁর প্রয়ানে অনেকের যা মনে হয়েছে আমারও  তাই মনে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর ‘টাটা ন্যানো’ কারখানার কথাটা। সেই বিভীষিকার দিনগুলি। এক মিলিটান্ট ট্রেড-ইউনিয়ন কে প্রশ্রয় দেওয়া পার্টি ও সরকাররের বোধোদয় হয়েছিলো। দীর্ঘ তিন দশক পর তারা বুঝতে পেরেছিল যে বিনিয়োগ ও শিল্প পশ্চিমবঙ্গের নবোন্মেষের এক প্রধান কারণ হতে পারে। তারা চেষ্টা করতে থাকে যাতে রাজ্যে সেই বিনিয়োগ আসে এবং তার সঙ্গে অনেক বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডও এই রাজ্যে এসে বিনিয়োগ করে।

রতন টাটা কে তাঁরা আমন্ত্রণ জানালেন এই রাজ্যে নতুন প্রজেক্ট চালু করার জন্য ও এক বৃহৎ অংকের লগ্নির অর্থ পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসার জন্য। অনেক আশা নিয়ে রতন টাটা এলেন পশ্চিমবঙ্গে।  এই রাজ্যে শিল্পের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করার এক ইতিহাসিক সুযোগ এলো। কিন্তু তা হলো না।  রাজনৈতিক স্বার্থপরতা, বিরোধী ও শাসক এর স্বার্থ চালিত অন্ধতা, ও পরস্পর চাপানউতোর এর জেরে হাত ছাড়া হয় গেলো এই সুযোগ।

রতন টাটা কে হেনস্থা করা হলো, অবশেষে তিনি ঘোষণা করেলন যে রাজনৈতিক কারণে তিনি বাধ্য হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলে যেতে। সিঙ্গুর এর মানুষেরা কিচ্ছুই পেলেন না, রিক্ত হস্তে তাঁরা তাকিয়ে থাকলেন, তাঁদের এক নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন অনিশ্চয়তার কুয়াশায় মিলিয়ে গেলো। শাসক দল পরিস্থিতি সামলাতে পারলো না, তদানীন্তন বিরোধী পক্ষ নিজেদের রাজনৈতিক লাভের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ কে ঠেলে দিলো এক অন্ধকার পথে।  সেই অন্ধকার পথেই  এই রাজ্য এখনো বিচরণ করছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহ অসহায় হয় জানালেন তিনি ‘দুঃখিত’। রতন টাটা জানালেন তিনি ন্যানো কারখানা নিয়ে যাচ্ছেন গুজরাটের সানন্দে। সানন্দে সূচনা হলো টাটার গাড়ি কারখানা যা  এখন এক  মেগা প্লান্ট এ  – ১১০০ একর – এ পরিণত হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদী তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, রতন টাটা যে মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করলেন নরেন্দ্র মোদী তাকে একটি SMS পাঠালেন: ‘Welcome’, এবং টাটার ন্যানো ফ্যাক্টরি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুজরাটে সরে গেলো। মোদী টাটা কে বললেন যে এই প্রজেক্ট শুধু মাত্র টাটার নয়, এই প্রজেক্ট আমাদের। এই ঘটনা মনে করে, রতন টাটা বলেছিলেন যে তাঁরা শান্তিতে কাজ করার জায়গা খুঁজছিলেন, নরেন্দ্র মোদির সেই অফার -এ তিনি কৃতজ্ঞ কারণ মোদী তাঁদের উপর ভরসা দেখিয়েছিলেন সেই কঠিন সময়ে।

নরেন্দ্র মোদী পরে বলেছিলেন, একটু হেঁসে, ‘দেখো আমার এক টাকার মূল্যের SMS কি করে দিলো গুজরাটের শিল্পের ক্ষেত্রে। অনেক দেশ চেয়েছিলো এই শিল্প প্রকল্প কে টানতে, কিন্তু নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর গুজরাটের সরকার সুনিশ্চিত করেছিল যাতে এই প্রজেক্ট ভারতের বাইরে না যায়।

২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট এর এক বেঞ্চ  – জাস্টিস G.S. Singhvi এবং H.L Dattu ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন তৎকালীন গুজরাট সরকারের  – তখন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী – জমি অধিগ্রহনের প্রক্রিয়ার  । তাঁরা বলেছিলেন যে গুজরাট এক মাত্র রাজ্য যেখানে জমি অধিগ্রহণে কোনো রকম সংঘাত হয় না, এবং তাঁরা এই প্রস্তাবও রেখেছিলেন যে অন্যান্য রাজ্যের আমলারা গুজরাট সরকার -এর অধীনে শান্তিপূর্ণ ভাবে জমি অধিগ্রহণ কি ভাবে হয় সেই ট্রেনিং নিতে পারেন। এই কথা গুলো কিছু মানুষ চায় ভুলিয়ে দিতে।

টাটার কারখানা গুজরাট যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে সংঘাত এবং ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির মানসিকতা, এর জেরে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হারালো এক উজ্জ্বল সুযোগ। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের হার হলো, হারিয়ে গেলো এক নতুন ভোর, শিল্পের পথে অনেকটা পিছিয়ে গেলো এই রাজ্য।

পূর্বদোয় এর পথে এই রাজ্য কে এগোতে হলে, এই মানসিকতা কে বিসর্জন দিতে হবে, এমন এক পরিবেশ তৈরী করতে হবে যা বিনিয়োগ, লগ্নি এবং শিল্প কে এই রাজ্যে আকৃষ্ট করতে পারবে। নাহলে আরো  পিছিয়ে পড়তে হবে।

Articles
Nehru Was Against Bangladeshi Hindu Refugees Entering India Despite Then Bengal CM’s SOS, Reveals BJP Leader’s New Book

At a time when Prime Minister Narendra Modi has not only voiced his support for Bangladeshi Hindus and other minorities under attack in the neighbouring country but also given Sheikh Hasina safe refuge, a new book by BJP leader Dr Anirban Ganguly makes a sensational claim. The book, which explores …

Articles
Bengali’s Classical Status: A Triumph for India’s Linguistic Heritage

The conferring of classical language status to Bengali is a tribute to the legions of thinkers and scholars who have devoted their best energies and thoughts to its preservation, promotion, and dissemination. The conferring of classical language status to Bengali during ‘Devipaksha’, when the whole of Bengal fervently celebrates Durga …

US President Joe Biden and Prime Minister Narendra Modi. (File image: Reuters)
Articles
A Proposed Semiconductor Plant And West Bengal’s Chance to Come Out of The Politics of Disruption

Prime Minister Narendra Modi recently announced, along with US President Joe Biden, the firming up of the deal for the semiconductor plant to be set up in Kolkata In a week, Kolkata and West Bengal saw two major developments in terms of investment, industry, futuristic technology, and advancement. Prime Minister …