জনজাতি সমাজের বীর চরিত্র স্মরণে আলোচনা ও পুস্তক প্রকাশ
- By : Anirban Ganguly
- Category : In News
আমাদের ভারত, কলকাতা, ১৪ নভেম্বর (হি. স.) : ১৫ ই নভেম্বর দিনকে ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্ম জয়ন্তীকে ‘জনজাতি গৌরব দিবস’ ঘোষণা করেছে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকার। ১৪ নভেম্বর কলকাতায় আইসিসি-র হলে বিশেষ ‘অঙ্কুর’, ‘কাঙ্খিত জাতীয়তাবাদ ও গতিময় সংঘবদ্ধতার পুনরুজ্জীবন’ এবং ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হল। অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাষ্ট্র গঠনে জনজাতি সমাজের ভূমিকা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ড.শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্দেশক ডক্টর অনির্বাণ গাঙ্গুলি, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডির ডিরেক্টর ডঃ স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ, সিধু কানহু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক ঠাকুর প্রসাদ মুর্মু, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর রাজেন্দ্র কুমার সাহা।
আলোচনা সভায় ‘জনজাতি সমাজের বীরত্ব ‘ বিষয়ক একটি বই প্রকাশিত হয়। এর লেখক ডঃ সুমন চন্দ্র দাস। প্রায় ৫০ জন জনজাতি সমাজের স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরত্বের চরিত্রকে এতে সংকলিত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আলোচনার বিষয়ে উঠে আসে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জনজাতি সমাজের একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা। এই স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের গৌরব গাঁথায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কোল, ভীল, সাঁওতাল, ওঁরাও, স্বয়ংগার, করুচিয়া, কন্ধ, খাসি, গৌন্ড, বঘেল, বেরাদ, জয়েন্তিয়া, গাঢ়, মিজো, ভূইয়া জনজাতি সমাজের একটা ব্যাপক আত্মত্যাগের ভূমিকা ছিল।
মহাবিদ্রোহের কিছুটা আগে ১৮৫৫ সালের সময় থেকে ব্রিটিশদের চিরস্থায়ী জমির বন্দোবস্ত, জমির অধিকার, ফসলের কর, জোর পূর্বক চাষাবাদ, উৎপন্ন ফসলের উপর ভাগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানীর শাসনের বিরুদ্ধে ছোট নাগপুর মালভূমি অঞ্চল, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, মেঘালয়, ন্যাগাল্যান্ড, মিজোরাম, বিহার, মহারাষ্ট্র, বঙ্গের মালদা- মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে এই সাঁওতাল, আদিবাসী জনজাতি সমাজের বিদ্রোহ সংগ্রাম সংগঠিত হয়।
ভারতের ইতিহাসে মহাবিদ্রোহের প্রেক্ষাপট ও স্বরূপ রচনায় আদিবাসী জনজাতি সমাজ, কৃষক সমাজ, ভারতীয় সৈনিক সমাজের একটা বিশেষ যোগদান ছিল। এই আন্দোলনে প্রান্তিক অন্তজ সমাজের বিরাট ভূমিকা ছিল। বন, জঙ্গল, প্রাকৃতিক সম্পদের উপর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের একটা লোলুপ দৃষ্টি ছিল আর তাই ভারতীয় প্রাচীন কৌম সুসংহত সমাজের জল জঙ্গল মাটি থেকে উৎখাত করে দখল করে সামাজিক শোষণের বিশেষ প্রচেষ্টা চালায়। আর তাই নিজের নিজের প্রাকৃতিক সম্পদ, ভূমি, ফসল এবং নিজেদের সার্বভৌমকে রক্ষা করতে ব্রিটিশ ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রাণ উৎস্বর্গ করতে দ্বিধা করেন নি।
ছোট ছোট রাজ্যের ছোট ছোট সুসংহত কৌম সমাজের সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, ভাষা, আধ্যাত্মিক পরম্পরা এবং ভৌগলিক অস্তিত্বকে স্বতন্ত্র রাখতে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ইংরেজ ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম করেন। এই প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অনেকে বীর নায়ক ব্রিটিশদের শাসন এবং শোষণের বিরুদ্ধে সামজিক আন্দোলন করে নিজের প্রাণের আত্মবলি দেন। জনজাতি সমাজের সংগ্রামী ইতিহাসের কথা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের ৭৫ তম বর্ষে বিশেষ নিবেদন।